ছেলেটির সেজো বোন (17 yr) তখন বাথরুমে স্নান করছিল, হঠাৎ তার চোখ চলে যায় ছাদের দিকে, অবাক হয়ে সে দেখে পাশের বাড়ির ৩ জন ছেলে গাছে উঠে তার স্নান করা দেখছে আর মোবাইলে সেটার ফোটো তুলছে |
বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘটনাটা সে জানায় বাড়ির লোকেদের, তার মুখ থেকে এই কথা শুনে তখন বাবা-মা-দিদি ও সেই ছেলেটি সবাই পাশের বাড়িতে যায় অভিযোগ জানাতে, আশা করি তাদের এই কাজ টি কোন অপরাধ ছিল না, তারা শুধু এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছিল মাত্র |
কিন্তু হঠাৎ ই ওখানকার প্রায় ৮-১০ জন ছেলে সেখানে আসে লাঠি ,রড, টাঙি, কুড়ুল নিয়ে, কোন অভিযোগ শোনা তো দূর অস্ত , তারা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছুটে এসে মারামারি শুরু করে দেয়, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তার ছোট বোন (13 yr) আর সেজো বোন (17 yr) কে বলপূর্বক টেনে ওদের বাড়ির মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়|
দুই বোনের কান্না, যন্ত্রনা পেয়ে আর্ত চিৎকার ... উফ !
বাড়ির লোক কি আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে ? ছেলেটি কোনভাবে বেরিয়ে ছুটে চলে যায় ওই ঘরে, সেজো বোনের জামা তখন ছিন্নভিন্ন ...
সারা শরীরে রক্তের দাগ, গালে, মুখে নিষ্ঠুর রডের আঘাতের ফলে রক্তাক্ত মুখ, তখনও একটা জানোয়ার তার মাথার উপর একটা রড তাক করে রেখেছে,
সবে মারতে যাবে, বিদ্যুৎ গতিতে ছেলেটি তখন তার হাত টা বাড়িয়ে দেয় সেই আঘাত থেকে নিজের বোনকে বাঁচানোর জন্য., বোন বেঁচে যায় আঘাত থেকে, কিন্তু সেই রডের বাড়ি এসে পড়ে তার হাতে, জানোয়ার গুলো তাকে ব্যাথায় ককিয়ে ওঠার সুযোগ টাও দেয়নি. আচমকা কেউ পেছন থেকে টাঙি দিয়ে তার বোনের মাথায় মারে. ওখানেই সাথে সাথে অজ্ঞান|
জ্ঞান ফিরলে সে চোখ খুলতেই দেখতে পায় তার ছোট বোনের রক্তাক্ত শরীর টা , অচৈতন্য অবস্থায় পাশে পড়ে রয়েছে, জামা পুরো ছিন্ন ভিন্ন, রক্তে ভেজা, মাথায় প্রায় ৫ ইঞ্চির গভীর ক্ষত, পাশে সেজো বন ছটফট করছে যন্ত্রনায়, আর বাবা-মায়ের কথা নাই বা বললাম. নিজের সন্তানদের এইভাবে দেখতে কেমন লাগে তা আমার বর্ণনা করবার ভাষা নেই. কোনোভাবে ছেলেটি সেখান থেকে উঠে তার দুই বোনকে নিয়ে ছুট দেয় হাসপাতালের পথে ....
কি ভাবছেন ? এখানেই নিষ্পত্তি ? তাহলে আপনি ভুল ....
বাজার এ পৌঁছে না জানি সে কত লোকের কাছে মিনতি করেছে, পায়ে ধরেছে যে "দাদা, কাকু, মামা আমাদের একটু হাসপাতালে পৌঁছে দিন. অন্তত আমার ছোটো বোন টা কে নিয়ে যান"... নাহহ, কেউ আসেনি এগিয়ে, বরং দূরে সরে গিয়ে সবাই তামাশা দেখল আর সমালোচনা করল, যেন তারা সার্কাসের ক্লাউন ! কেউ আবার রক্তের দাগ থেকে ঘেন্নায় দূরে পালালো, নিজেদের সম্ভ্রম রক্ষায় তখন ব্যস্ত সবাই |
তারা ভীত, এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকতে,.... সবাই তখন চাইছিল গল্পের মত সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার নিজেদের সুখী জীবনে মনোনিবেশ করতে, কে এত ঝামেলা পোয়াবে বাপু !! পুলিশ- কোর্টের টানাহেচঁড়া হবে শেষে ! অত দয়াবান হয়ে কাজ নেই !
কোনভাবে এরপর তারা যায় কাছের গ্রামীন হাসপাতালে, সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট বসে থাকার পর, নার্স এসে বললেন "ডাক্তার নেই, অপেক্ষা কর", একটা করে ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষত স্থানে চেপে রাখতে বললেন. দারুন শুশ্রুষা ! বাজার এ অনেক গাড়ি ছিল কিন্তু একটাও গাড়ি এগিয়ে আসেনি নিয়ে যাওয়ার জন্য, ছেলেটির বাবা লোকেদের পায়ে পর্যন্ত পড়েছে, নাহ! তাও কারোর দেখা পাওয়া যায়নি, কেউ আসেনি....
তারপর অসহায় হয়ে ওর বাবা নিজের স্কুটারে করে ছেলেটিকে আর তার বোনকে কোনোভাবে থানায় নিয়ে যায়, ওখানে পুলিশকে বলা হয় হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে. বলিহারি বঙ্গপুলিশ ! উত্তর আসে...
" হেঁটে চলে যান না". যেন, পাড়ায় মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে !
কিছু করার ছিল না, তারপর বাবা অনেক কষ্টে একটা গাড়ি ভাড়া করে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়, প্রথমে খড়গপুর সাব ডিভিশন হাসপাতাল, তারপরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে... তবে ক্রমশ ছোট বোনের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে সেখান থেকে ডাক্তার তাকে কলকাতার পি.জি. ( S.S.K.M) তে নিয়ে যেতে বলে...
২/১০/২০১৭ ----
থানায় F.I.R হয়েছে. ৮জন এখনো অবধি ধরা পড়েছে..
তবে এরপর থেকেই শুরু হয়েছে হুমকির পালা, বাড়িতে থাকা দায় হয়ে উঠেছে.. পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তারা খুব চিন্তায় আছে কারণ ঘটনা ঘটার পর ৭দিন হয়ে গেলেও পুলিশ হুমকির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি, এখন তাদের মনে হয় কোথাও একটা রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে যার ফলে পুলিশ হয়ত নিরুত্তাপ, আসামীরাও রাজনৈতিক সাহায্য পাচ্ছে বলেই তারা মনে করে |
আজ ৩ দিন হল সে আর তার ছোট বোন বাড়ি ফিরেছে, আপাতত সবাই কিছুটা সুস্থ আছে, তবে মানসিক এবং আর্থিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত |
কোথায় বাস করি আমরা? এটাই কি সভ্য ভারত?
পাঠকদের কাছে অনুরোধ শুধু পড়ে 'sad/angry react' করে চলে যাবেন না কেউ, Share করে সবার সামনে আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রূপ তুলে ধরুন|