JanaSoftR

Wednesday, 12 April 2017

মমতাকে খুনের নিদান: সংসদে নিন্দায় কেন্দ্র ও BJP



মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথার দাম ঘোষণা করে বিজেপির যুব মোর্চা নেতার হুমকি-মন্তব্যের রেশ আছড়ে পড়ল সংসদে। এদিন শাসক ও বিরোধী সাংসদরা একসুরে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। জবাবে, নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এধরনের মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, চাইলে অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

এদিন উভয় কক্ষেই বিষয়টি উত্থাপন করেন তৃণমূল সাংসদরা। তাঁদের সমর্থন করে সব রাজনৈতিক দল। রাজ্যসভার জিরো আওয়ারে যোগেশ ভার্শনের মন্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, বিজপির এক যুব নেতা প্রকাশ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘শয়তান’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর মাথার ওপর ১১ লক্ষ টাকা ঘোষণা করে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন।

এপ্রসঙ্গে, সংসদ ও সরকারের তরফে ওই নেতার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হোক বলে দাবি করেন তিনি। কী করে একজন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত নেত্রীর সম্পর্কে এহেন মন্তব্য করা হয়, সেই প্রশ্নও তোলেন শুখেন্দু। তাঁর আরও অভিযোগ, ধর্ম ও অন্যান্য বিষয়ের মাধ্যমে রাজ্যে ‘কায়েমি সন্ত্রাস রাজ’ তৈরি করছে কেন্দ্র।

জবাবে, সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, কেন্দ্র ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছে। রাজ্য সরকার এই ইস্যুতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। একই কথা বলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। তিনিও জানান, এক্ষেত্রে এফআইআর দায়ের হওয়া উচিত। আইন আইনের পথেই চলবে।

যদিও, বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। উচ্চকক্ষে ফের এই একই ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হন বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী। বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দাবি করেন, শুধু নিন্দা না করে বিজেপির উচিত ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কংগ্রেস, বাম ও সমাজবাদী পার্টিও তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যসভায় সোচ্চার হয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা করে।

যদিও, বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেন, তিনিও একজন মহিলা। পুলিশের সামনে তৃণমূলের ১৭ জন গুণ্ডার হাতে তাঁকে মার খেতে হয়েছে। এই বিষয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব দাবি করেন।

রাজ্যসভার মতো এদিন মমতাকে হুমকি-ইস্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভাও। এদিন নিম্নকক্ষে ইস্যুটি নিয়ে সোচ্চার হন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেবলমাত্র নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী নন, এই কক্ষের প্রাক্তন সদস্যও বটে। তাঁর মতে, এধরনের ব্যবহার অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সংসদের তরফে নিন্দা প্রকাশ করারও দাবি তোলেন তিনি।

তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে জানান, এধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। কোথাও ঘটা উচিত নয়। তিনি যোগ করেন, সরকারের তরফে এক কঠোর বার্তা পাঠানো উচিত যাতে ভবিষ্যতে এধরেনর ব্যবহার আর কেউ না করে।

জবাবে সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তিনি (মমতা) একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যোগ্য সম্মান প্রাপ্য। আমরা (যোগেশ ভার্শনের) মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। স্পিকার সুমিত্রা মহাজনও বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক মহলে এধরনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এই পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে সকলের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

শুধু রাজধানী নয়, মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের ফতোয়া নিয়ে নিন্দায় মুখর এরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলিও। রাজনৈতিক বিরোধিতা সরিয়ে এদিন মমতার সমর্থনে এগিয়ে আসে বাম ও কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, আমরা এধরেনর নিচ মন্তব্যের বিরুদ্ধে। এধরনের মন্তব্য, শুধু হিংসা নয়, মেরুকরণও ছড়িয়ে দেয়। অবিলম্বে, ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও যোগেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি তোলেন। বলেন, সম্পূর্ণ বর্বর ও অসভ্য।

রাজ্য বিজেপির তরফেও যোগেশের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। এদিন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এক বিবৃতি পেশ করে জানান, তিনি এধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছেন। বলেন, আমরা এধরনের মন্তব্য সমর্থন করি না। তোষণের রাজনীতি করার জন্য মমতাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু আমরা হিংসা সমর্থন করি না। আমরা এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি।
JanaSoftR
Share This:   Facebook   Twitter   Google+   Stumble   Digg    Whatsapp




0 comments:

Post a Comment