JanaSoftR

Thursday, 13 April 2017

ভোট বাড়ল আর চিন্তাও বাড়ল তৃণমূলের , দক্ষিণ কাঁথিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বিজেপি



জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছে তৃণমূল। ‘অধিকারী গড়’ দক্ষিণ কাঁথিতে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৩৪ হাজারের আশেপাশে। এক বছরের মাথায় সেই ব্যবধান বেড়ে পৌঁছল সাড়ে ৪২ হাজারে। কিন্তু চমকে দেওয়ার উপকরণ তৃণমূলের এই সাফল্যে নয়। আরও অনেক বেশি চমকে দিল বিজেপি। ৫২ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে দক্ষিণ কাঁথিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বিজেপি। বামেরা প্রায় ধূলিসাৎ। কংগ্রেসের অস্তিত্ব পৌঁছে গেল আনুবীক্ষণিক স্তরে।

শুভেন্দু অধিকারী চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ের ব্যবধানের রেকর্ড গড়ে দেবেন। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অন্তত ১ লক্ষ ভোটে জিতবেন দাবি ছিল শুভেন্দুর। একটি বিধানসভা কেন্দ্রে কি এত বড় ব্যবধানে জয় স্বাভাবিক? রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন ছিল, আড়াই লাখে জেতা তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে যদি দু’বছরের মধ্যে পাঁচ লাখে পৌঁছে যায় ব্যবধান, তা হলে দক্ষিণ কাঁথির মতো কেন্দ্রে ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতা যাবে না কেন? শুভেন্দু অধিকারী যে খুব গোলমেলে প্রশ্ন তুলছিলেন, তা কিন্তু নয়। কিন্তু হিসেবটা কিছুটা গুলিয়েই গেল। তৃণমূল এ বারের উপনির্বাচনে আগের চেয়ে বেশি ভোট পেল, আগের চেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী হল। কিন্তু বিজেপি ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল এবং বুঝিয়ে দিল, রাজ্য রাজনীতিতে এখন তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর তাদেরই। বুঝিয়ে দিল, বাম-কংগ্রেস ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার পথে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই ছিল ত্রিমুখী। এক দিকে ছিল তৃণমূল, অন্য দিকে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাম-কংগ্রেস জোট। বিজেপি ছিল তৃতীয় শক্তি। এক বছর আগের সেই নির্বাচনে দক্ষিণ কাঁথিতে মোট ভোট পড়েছিল ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৮০৩টি। জয়ী তৃণমূল পেয়েছিল ৯৩ হাজার ৩৫৯টি ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কংগ্রেস সমর্থিত বাম প্রার্থী পেয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৪৬৯টি ভোট। আর তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপি পেয়েছিল ১৫ হাজার ২২৩টি ভোট।

২০১৭-র উপনির্বাচনে লড়াই হল চতুর্মুখী— তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস, বিজেপি। মোট ভোট পড়ল ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৬২২টি। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৯৫ হাজার ৩৬৯টি। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৫২ হাজার ৮৪৩টি। সিপিআই প্রার্থী পেলেন ১৭ হাজার ৪২৩টি ভোট। কংগ্রেস প্রার্থী পেলেন মাত্র ২ হাজার ২৭০টি ভোট।

অর্থাৎ, ২০১৬-র নির্বাচনে বিজেপি যে ভোট পেয়েছিল, এ বারের নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট তার কাছাকাছি। আর সে বার বাম-কংগ্রেস মিলে যে ভোট পেয়েছিল, এ বার বিজেপির ভোট প্রায় তার কাছাকাছি। বিরোধী শিবিরে ঠিক উল্টে গিয়েছে হিসেবটা। ২০১৬ সালে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এ বার পেল ৩১ শতাংশ। তৃণমূলও এক বছর আগে পেয়েছিল ৫৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট। এ বার পেল ৫৫ শতাংশের কিছু বেশি।

জয়ের খবর নিঃসন্দেহে সুখবর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তা নিয়ে সকাল সকালই সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগের বারের চেয়ে এ বারে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বাড়ায় তিনি খুশি। কিন্তু দক্ষিণ কাঁথির উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি ছিলেন যিনি, সেই শুভেন্দু অধিকারীকে সকাল থেকে খুব একটা উচ্ছ্বাস দেখাননি। বেলার দিকে তিনি মুখ খুললেন এবং বললেন, ‘‘আগের বারের চেয়ে এ বার ৪ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। তাতেও আমাদের প্রাপ্ত ভোট আগের বারের চেয়ে বেশি।’’ বিজেপির ভোট এতটা বাড়ল কী করে? শুভেন্দু অধিকারীর জবাব, ‘‘এ রাজ্যে এখন বিরোধী সব এক জায়গায়। বিজেপির ভোট কেন এত বাড়ল, আর বামেদের ভোট কমে কেন এত নীচে নেমে গেল, সেটা বিমান বসুকে জিজ্ঞাসা করুন।’’

উচ্ছ্বাস স্পষ্ট রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, ‘‘এই রাজ্যে আমাদের সংগঠন সবচেয়ে দুর্বল যে জেলায়, সেই পূর্ব মেদিনীপুরে এই রকম ফলাফল প্রমাণ করে দিল, বিজেপিকে আর রোখা যাবে না। দক্ষিণ কাঁথিতে সে ভাবে সংগঠনই নেই আমাদের, সে ভাবে প্রচারও করা যায়নি। তা সত্ত্বেও ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছি আমরা।’’ দিলীপ ঘোষের কথায়: ‘‘অনেক দিন ধরেই আমরা বলছিলাম, বাংলায় আমরাই এখন প্রধান বিরোধী শক্তি। দক্ষিণ কাঁথির মতো কেন্দ্রে আমাদের দ্বিতীয় স্থানে তুলে এনে রাজ্যের মানুষও প্রমাণ করে দিলেন, তৃণমূলের প্রতিপক্ষ আমরাই।’’

কংগ্রেস শিবিরে হতাশা প্রবল। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কাঁথিতে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। জোট ছিল, তাই বামেদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল আসনটি। কিন্তু এ বার জোট হয়নি, কংগ্রেস ও বাম আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। কংগ্রেস প্রার্থী মাত্র ২ হাজার ২৭০টি ভোট পেয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই কংগ্রেসের ফল এই রকম। আমরা অনেক দিন ধরেই বলছি, রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দক্ষিণ কাঁথির ফলাফলেই প্রমাণ হয়ে গেল, আমরা ঠিকই বলছিলাম। এ বার আমরা দিল্লির পরবর্তী নির্দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’ নাম না করলেও, প্রদীপবাবুর তির যে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর দিকেই, তা স্পষ্ট। অধীরের নেতৃত্বে কংগ্রেস এ রাজ্যে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলেই তিনি বোঝাতে চেয়েছেন। দিল্লির পরবর্তী নির্দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বলে যে মন্তব্য প্রদীপবাবু করেছেন, তাতে স্পষ্ট, অধীর চৌধুরীর অপসারণের দাবি উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অন্দরে।

কংগ্রেস না হয়, সাংগঠনিক দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ল। কিন্তু বিজেপি এগিয়ে এল কী ভাবে? বিজেপির রাজ্য সভাপতিও তো দাবি করছেন, দক্ষিণ কাঁথিতে তাঁদের সংগঠন দুর্বল। প্রদীপ ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘এ রাজ্যে ধর্মান্ধ রাজনীতি শুরু হয়েছে। আগে এটা ছিল না। কিন্তু এখন একটা ধর্মান্থতার স্রোত বইছে।’’ এই ধর্মান্ধতার স্রোত তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির ‘তোষণ নীতি’র জন্যই— মন্তব্য কংগ্রেস সাংসদের। তিনি বললেন, ‘‘হিন্দু হোক বা মুসলিম, কোনও সম্প্রদায়কেই তোষণ করা উচিত নয়। তোষণ ছিল বলেই এই পরিস্থিতি তৈরি হল। ছোট ছোট শিশুরা অস্ত্র হাতে রামনবমীর দিন পথে নামল। এর অর্থ কী? এর অর্থ হল, ওই শিশুদের পরিবারগুলিও মেরুকরণের ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছেন। পরিবার যদি না চাইত, বিজেপি ওদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারত না।’’

JanaSoftR
Share This:   Facebook   Twitter   Google+   Stumble   Digg    Whatsapp




0 comments:

Post a Comment