রামধনু এখন রংধনু হয়ে গিয়েছে! তা হলে, মাননীয়ার ইচ্ছা হলেই, রামছাগল কি পশ্চিমবঙ্গে রংছাগল হয়ে যাবে?
এমনই প্রশ্ন তুলছে এখন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি৷ শুধুমাত্র আবার প্রশ্ন উত্থাপনও নয়৷ বরং, রামধনুকে যেভাবে রংধনুতে বদলে দেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন লাগাতার প্রচারও শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি৷ পশ্চিমবঙ্গের কোনও মনীষী অথবা বিশিষ্ট কোনও ব্যক্তি কিংবা কোনও স্থানের নামের শুরুতে যেখানে ‘রাম’ রয়েছে, তেমন বিভিন্ন নাম উল্লেখ করে ‘রাম’-এর বদলে ‘রং’ যোগ করে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷আর, এ ভাবেও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে, জোরদার বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজ্য বিজেপি উঠে আসতে চাইছে বলেও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের বিভিন্ন অংশ৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্থাপন করা ওই সব প্রশ্নের সঙ্গে রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হচ্ছে, ‘সাবধান বঙ্গবাসী আমরা শঙ্কিত’৷ আর, তার সঙ্গেই এখনও পর্যন্ত প্রখ্যাত বাঙালি রম্যলেখক শিবরাম চক্রবর্তী, শিল্পী রামকিংকর বেইজ, রামপ্রসাদী গানের রচয়িতা তথা কবিরঞ্জন হিসেবে খ্যাত অষ্টাদশ শতাব্দীর শাক্ত কবি ও সাধক রামপ্রসাদ সেন এবং বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান লেখক আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর নাম যেমন উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ তেমনই, স্থান হিসেবে রামপুরহাট এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী বেচারাম মান্নার নামও উল্লেখ করা হয়েছে৷ এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে৷ রামমোহন রায় সহ আরও অনেকের নাম করা হবে৷’’
কিন্তু, কেন শঙ্কিত রাজ্য বিজেপি? দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে সার্বিকভাবে এখন বাংলাদেশীকরণের চেষ্টা চলছে৷ এখানে গণতন্ত্র নেই৷ আমাদের সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না৷’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র বাঁচাও, বাংলা বাঁচাওয়ের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে৷’’ এ দিকে, রামধনুকে বদলে রংধনু করে দেওয়ার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য বিজেপির তরফে যেভাবে প্রচার জারি রাখা হয়েছে, তার জন্য যুক্তিও দেওয়া হয়েছে৷ তবে, ওই যুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ না করে তাঁকে ‘মাননীয়া’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে৷ যেমন, শিল্পী রামকিংকর বেইজের ছবি দিয়ে যে প্রতিবাদ জারি রেখেছে রাজ্য বিজেপি, সেখানে এমনই বলা হয়েছে, ‘সাবধান বঙ্গবাসী আমরা শঙ্কিত ইনি রংকিঙ্কর বেইজ হয়ে যেতে পারেন মাননীয়ার ইচ্ছা হলেই কারণ মাননীনার ইচ্ছায় ‘রামধনু’ এখন ‘রংধনু’৷
একই রকম ভাবে, শিবরাম চক্রবর্তী থেকে শিবরং চক্রবর্তী, রামপ্রসাদ সেন থেকে রংপ্রসাদ সেন, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী থেকে রঙেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, রামপুরহাট থেকে রংপুরহাট৷ তেমনই, যদিও বর্তমানে মন্ত্রী নন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা বেচারাম মান্না, তবে তাঁর নাম উল্লেখ করেও রাজ্য বিজেপি এমনই প্রশ্ন তুলেছে, ‘রামধনু যদি ‘রংধনু’ হয়, মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে কী বলবেন মাননীয়া?’ তবে, রাজ্য বিজেপির এই ধরনের আন্দোলনের জেরে রংধনু যদি আবার বদলে রামধনু না হয়, তা হলে কী করা হবে? রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘সপ্তম শ্রেণির একটি বইয়ে রামধনুকে বদলে রংধনু করা হয়েছে৷ তৃতীয় শ্রেণির একটি বইয়ে বাবা, মা, ঠাকুমা, ঠাকুরদা, মামা, মাসি-র বদলে উর্দু অথবা অপরিচিত শব্দের অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে৷ শিক্ষার ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস৷’’
একই সঙ্গে রাজ্য বিজেপির ওই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘মালদহের বৈঠকে আমরা একটি শিক্ষা প্রস্তাবও গ্রহণ করেছি৷ এ ভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি জারি থাকবে৷ তার জন্য যত দূর যেতে হয় যাওয়া হবে৷’’ শুধুমাত্র তাই নয়৷ দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ এ রাজ্যের নাম আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাখার পক্ষে৷’’ একই সঙ্গে ফের তিনি বলেন, ‘‘রামধনুকে বদলে রধনু করা হয়েছে৷ তা হলে, রামছাগলকে কি রংছাগল বলা হবে?’’ রাজ্যের গত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও বাংলার বিভিন্ন মনীষীর বিষয়ে উল্লেখ করে প্রচার করেছিল রাজ্য বিজেপি৷ রামধনুর বদলে রংধনু-র প্রতিবাদে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার জারি রেখেছে রাজ্য বিজেপি, তার মাধ্যমে কি বাঙালির কোনও অনুভূতি ছোঁয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে? দেবশ্রী চৌধুরীর কথায়, ‘‘আমরা কখনও কোনও অনুভূতি নিয়ে রাজনীতি করি না৷ আমাদের কাছে সবার প্রথমে দেশ৷’’
0 comments:
Post a Comment