JanaSoftR

Wednesday, 1 February 2017

মোদীর মোক্ষম চালে মধ্যবিত্তের পৌষমাস, রাজনীতিকদের সর্বনাশ

নোট বাতিল ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক দলের অনুদান সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উঠেছে। এ বার সেই পদক্ষেপ করেই ফেললেন নরেন্দ্র মোদী।


সামনে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সাধারণ মানুষের উপরে আর্থিক সংস্কারের বোঝা যে নরেন্দ্র মোদী চাপাবেন না, সেটা অনুমান করা গিয়েছিল। সেই অনুমান মিলেও গিয়েছে। গোটা বাজেটেই মধ্যবিত্তকে সুবিধা দিয়েছেন অরুণ জেটলী। সেটাই চেয়েছিলেন মোদী, জেটলীরা।

একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের আয়ের উপরে কার্যত নজরদারির ব্যবস্থা করে ফেলল কেন্দ্র। এ বার অনামি আয় দেখিয়ে কালো টাকার পাহাড় জমানো যাবে না রাজনৈতিক দলের তহবিলে। নোট বাতিল কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই বলে জানিয়ে মধ্যবিত্তের সমর্থন চেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার সমস্ত রাজনৈতিক দলের উপরে আর্থিক নজরদারির ব্যবস্থা সেই মধ্যবিত্তকে আরও খুশি করারই পদক্ষেপ।
সম্প্রতি এক হিসেবে দেখা যায়, কালো টাকার পাহাড় রয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তহবিলে। ২০০৪-২০০৫ থেকে ২০১৪-২০১৫ আর্থিক বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যে আয় করেছে, তার মধ্যে ৬৯ শতাংশই বেনামি দাতাদের থেকে এসেছে বলে ওই হিসেবের দাবি। আর তার মোট পরিমাণ, ৭ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। এই তথ্য সামনে আনে দিল্লির ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ নামের এক সংস্থা।

ওই হিসেবে দেখা গিয়েছে, ওই ১১ বছরে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলির মোট আয় ১১,৩৬৭.৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঘোষিত দাতাদের থেকে আয় ১,৮৩৫.৬৩ কোটি টাকা। যা রাজনৈতিক দলগুলির মোট আয়ের ১৬ শতাংশ। বাকি ১৫ শতাংশ আয় সম্পত্তি বিক্রি, ব্যাঙ্কের সুদ, কর্মীদের চাঁদা ইত্যাদি থেকে। সেই আয়ের মোট পরিমাণ ১,৬৯৮.৭৩ কোটি টাকা। ওই হিসেবে দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস বা বিজেপি অনামি আয়ের দিক থেকে
এগিয়ে থাকলেও আঞ্চলিক দলগুলির এমন আয় মোটেও কম নয়। অখিলেশ-মুলায়মের দল সপা-র মোট আয়ের ৯৪ শতাংশই বেনামি দাতাদের অনুদান।

এ বার এই বেনামি আয়েই আঘাত করতে চলেছে কেন্দ্র। অরুণ জেটলী বাজেট প্রস্তাবে জানিয়েছেন, ২০০০ টাকার বেশি নগদ অনুদান নিতে পারবে না কোনও রাজনৈতিক দল। চেক অথবা ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমেই অনুদান বা চাঁদা নিতে হবে। আর ২০০০ টাকার বেশি অনুদানদাতার নাম প্রকাশ করতে হবে রাজনৈতিক দলের হিসেবে। এখানেই না থেমে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন বদল করার কথাও বলেছেন জেটলী। তিনি বলেছেন, আরবিআই ইলেক্টোরাল বন্ড কিনতে পারবেন অনুদানদাতারা। সেই বন্ড ডিজিটাল মাধ্যমে কিনতে হবে এবং সেটা রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া যাবে। তারা ভাঙিয়ে নিতে পারবে।

এখানেই সমস্যায় পড়তে পারে রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ, দেশের বহু দলেরই অনলাইনে চাঁদা বা অনুদান নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এত দিন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদানে হিসেবে নাম উল্লেখ করতে হত না। কিন্তু সেই সীমা ২ হাজার টাকা হয়ে যাওয়ায় বাস্তবিক সমস্যা তৈরি হল। রাজনৈতিক দলেগুলির বিরুদ্ধে কালো টাকার কারবারিদের থেকে অনুদান নেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। এ বার সেই টাকা নেওয়াও মুশকিল হয়ে গেল। আরবিআই-এর বন্ড কিনে অনুদান দিতে গেলে প্রথমত সাদা টাকা দরকার, দ্বিতীয়ত কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়া হল সেটাও আয়কর দফতরকে জানাতে হবে। আবার রাজনৈতিক দলকে সেই বন্ড ভাঙাতে হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে। গোটাটাই সাদা-পথ। এর ফলে কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারি চলবে ছোট দলের রোজগারে। আরও স্পষ্ট করে কেন্দ্রের শাসক দল জানতে পারবে কোন ব্যবসায়ী কোন রাজনৈতিক দলকে কত অনুদান দিচ্ছে।
এই গোটা বিষয়কে এখনই ‘সর্বনাশ’ না বলা গেলেও রাজনীতিকদের কাছে ‘মলমাস’ তো বটেই।
JanaSoftR
Share This:   Facebook   Twitter   Google+   Stumble   Digg    Whatsapp




0 comments:

Post a Comment