স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা: হাওড়ার ধূলাগড়ের হিংসায় ‘জঙ্গিযোগে’র গন্ধ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক? গত বছরের ডিসেম্বর মাসজুড়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তাল হয়েছিল হাওড়ার ধূলাগড। নানা মহল থেকে অভিযোগ, দুই গোষ্ঠীর কথা বলা হলেও হামলা-অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছিল একটি বিশেষ গোষ্ঠীর দিকেই৷ যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরণের হিংসার কথা রীতিমতো অস্বীকার করা হয়েছিল৷ তবে, জাতীয়স্তরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজে হিংসার ছবি স্পষ্ট হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে নয়াদিল্লির নর্থব্লকের কর্তারা৷ বিশেষ করে দেশের শাসক বিজেপি এই হিংসায় উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর দিক ধরা পড়েছে নর্থব্লকের নজরদারিতে৷ মনে করা হচ্ছে, ধূলাগড়ের হিংসার পিছনে রয়েছে বড়সড় হাত৷ সম্ভবত ভিনদেশ থেকে আমদানি করা জঙ্গি সংগঠনের অঙ্গুলিহেলনেই ধূলাগড়ের হিংসা৷ সেই প্রাথমিক তদন্তের সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জঙ্গিদমনে তৈরি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে দিতেই প্রকৃত ঘটনা তুলে আনতে চাইছে বলে একটি বিশেষ সুত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে৷
গত বছর শারদ মরশুমের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ নানা কারণে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি৷ মালদা, উত্তর দিনাজপুর, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি জেলায় বেশ কয়েকটি হিংসার ঘটনা ঘটে বলে জাতীয়স্তরের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করায় হয়েছিল৷ বিশেষ করে হাওড়ার ধূলাগড়়ের ঘটনা রীতিমতো দেশজুড়েই উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার প্রকাশ্যে এই সমস্ত ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে৷ মুখে কোনও রকম হিংসা হয়েছে বলে অস্বীকার করলেও, শাসকদলের দুই বিধায়কেও তিরস্কার করা হয়েছিল বলে খবর! আবার ধূলাগড়ের ঘটনার জন্য হাওড়া জেলা পুলিশের এক কর্তারাও সরকারের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল৷ এই সমস্ত দিক থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না পেলেও সেই এলাকায় কিছু একটা তো ঘটেইছিল৷
তবে, রাজ্যের এই বেড়ে চলা হিংসার ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই এই ধরণের ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও সরকারিভাবে হিংসার ঘটনার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। একটি বিশেষ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের মধ্যেই নয়াদিল্লির নর্থব্লক তলে তলে খোঁজ-খবর করেই ঘটনার তদন্তভার দিতে চলেছে এনআইএয়ের হাতে৷
প্রশ্ন, দেশে এত তদন্ত সংস্থা থাকতে কেন এই ঘটনার উৎস সন্ধানের ভার পাচ্ছে জঙ্গি কার্যকলাক দমনে তৈরি এনআইএ-র হাতে? একটি বিশেষ সুত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে প্রাথমিক তদন্তেই ধরা পড়েছে বিস্ফোরক তথ্য৷ তারা জানতে পেরেছে পশ্চিমবঙ্গে বিগতদিনে এই ধরণের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি৷ কিন্তু, ইদানিংকালে রাজ্যের কোথাও না কোথাও এমন হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে৷
তারা জানতে পেরেছে, এই সমস্ত হিংসার ঘটনার পিছনে রাজ্যের স্থানীয় বাসিন্দা যুক্ত নয়৷ সমস্ত ক্ষেত্রেই বার বার উঠে এসেছে প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বহিরাগতদের নাম৷ আক্রান্তরাও জানিয়েছে যে, যারা হামলা চালিয়েছে তাদের অধিকাংশদের তারা আগে কোনদিন দেখেনি৷ এ থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্তককে আরও বেশি চিন্তায় ফেলে৷ নানা সুত্রে তারা জানতে পেরেছে, রাজ্য এবং দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে এই সমস্ত হিংসার মদত জুগিয়েছে প্রতিবেশি দেশ৷ কারণ বেশ কয়েকটি ঘটনায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে শ্লোগানও উঠেছিল৷ এথেকে নর্থব্লকের ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে, রাজ্য সরকারে ভালোমানুষিকে কাজে লাগিয়ে বিদেশি কোন জঙ্গি সংগঠন স্থানীয় মানুষদের উসকানি দিয়ে অবাধে হিংসার ঘটনা চালিয়েছে৷ জঙ্গিযোগের গন্ধ পেয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ধূলাগড়ের তদন্তভার এনআইএ-কে দিয়ে করাতে চাইছে৷ তবে, কবে নাগাদ এনআইএ-কে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি৷
0 comments:
Post a Comment